আমি তোমাকেই বলে দিবো, সেই ভুলে ভরা গল্প…


এক সময় আমার খুব প্রিয় একটা লাইন ছিল—

“আমি তোমাকেই বলে দিবো, সেই ভুলে ভরা গল্প, কড়া নেড়ে গেছি ভুল দরজায়।”

লোকটা কিসের ভুল দরজায়, কার ভুলে কড়া নেড়ে উদাস হয়েছিলো আমি নিশ্চিত নই। তবু লাইনটা যতবার শুনেছি এক গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে গেছি।

আমার পুরোনো তীব্র মাথা ব্যাথাটা আজ আবার চেপে ধরেছে। এলোমেলো শব্দগুলো ছুটে ছুটে চলে যাচ্ছে। এদিক-ওদিক। এখানে-ওখানে। এক এক করে ধরে এনে সেলাই করতে হচ্ছে জোর করে। ঘর অন্ধকার করে ল্যাপটপে খুটখুট। চোখে চাপ পড়ছে। খুব! মাথা ব্যথাটা আরও বাড়ছে। বাড়ুক। বাড়তে বাড়তে একটা সময় আচ্ছন্নের মতো হয়ে যাবো, সেই সময়টায় অনেকটা নিজেকে নেশাগ্রস্থের মতো মনে হতে থাকে। আর কিছুই অনুভব হয় না।

কী যেন বলছিলাম? ও হ্যাঁ…
ভুল দরজা, কড়া নাড়া…..।

ভুল করাটা মানব জাতির এক অতি প্রিয় কাজ। বাবা আদম (আ:) থেকে শুরু আমাদের এই সিলসিলা।

এই একজীবনে আমি বহুবার, বহুভাবে ভুল করেছি। বারবার একের পর এক কড়া নেড়েছি ভুল দরজাগুলোতে।

মানুষ ভুল থেকে শেখে। আমি মাতবর শ্রেণীর ছেলে। আমিও শিখেছি। আমি শিখেছি—এই পৃথিবীতে আসলে মানুষের জন্য কোনো ভালোবাসা জমা করে রাখতে নেই। সব ভালোবাসা, সব অনুভূতি, সব মমতা কেবল এক ও অদ্বিতীয় স্রষ্টার জন্যই বরাদ্দ রাখা উচিত। এতে যেমন ভালোবাসার অপচয় থেকে মুক্তি মেলে। তেমনি মুক্তি মেলে হৃদয় ভাঙ্গা আর প্রতারিত হবার যন্ত্রণা থেকে।

আমাদের অসহায়ত্ব নিয়ে আমাদের স্রষ্টা কোনোদিন হাসবেন না।

মানুষ মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে হাসে। খুব! এটাও মানুষের অতি প্রিয় কাজগুলোর একটি। কেউ উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলো—আমরা হেঁসে উঠি। কারণ আমি তো দাঁড়িয়ে আছি, নিরাপদ, সুস্থ আছি।

নিজের লেখার কোনো অর্থ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কী যেন লিখতে বসেছিলাম, ভুলে গেছি। সুতা কেটে গেছে বারবার। বানান আর গ্রামারের ভুলও বোধহয় অনেক হয়েছে আজ। গ্রামার পুলিশেরা বগল বাজাবে। বাজাক!

কী এসে যায়?

আমি সবসময় আমার সব কথা, লেখা, চিন্তা এডিট করতে থাকি। ভাবি, এরপর ভাবনাটাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করি কাগজের মতো, এরপর আবার সাজাতে থাকি। সাজাতে থাকি অনেকটা পাজল সলভের মতো। সব লেখা কারেকশান করতে থাকি। অনবরত।

শুধু এই জীবনটা কারেকশান করার কোনো যন্ত্র আমার হাতে নেই। এই যন্ত্রটাও আমার স্রষ্টার হাতে। এটাই ভরসা!

আমি ধীরে ধীরে হয়ে যাচ্ছি একটা সস্তা পেন্সিলের মতো। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছি, দু’দিক থেকেই শারপনার দিয়ে আমাকে কেটে কেটে এডিট করে ফেলা হচ্ছে। আমার আমিত্ব শেষ করে ফেলছি দিন দিন।

সেদিন একবার ভেবেছিলাম আঁতলামী ছেড়ে দেবো। সুযোগ চাই মানুষ হব স্লোগান তুলে ভালো মানুষ হয়ে যাব। সবাই ভাবলো মাথাটা গেছে এবার।

ভাবলাম খুব সাদা কথা বলব, সাদা চিন্তা করব, সাদা ভাষায় লিখব। সাদায় খাবো, সাদায় পড়বো। কিন্তু দেখলাম, ওটা ঠিক আমি না। অন্য কে যেন। অভিনেতার আমি।

আমি একবার ভেবেছিলাম, একটা নদী হব……..
বয়ে চলব……..এক একটা স্রোত হয়ে কেবল একবারই আসবো। বারবার না। এক ভুল একবারই করবো, বারবার না।
আমি হতে পারিনি।

আমি হতে চেয়েছিলাম একটা রঙিন ঘুড়ি, সফেদ পাখি, অতি প্রিয় ভালোবাসার শেষ চিঠি অথবা সাদা ভাতের মতো কাশফুল।

কিন্তু এক আমি হয়েছি এক ছেঁড়া ডানার একটা পাখি। ঘর অন্ধকার করে—কাপুরুষের মতো কাতরাতে জানা পরাজিত পাখি।

দিনকাল একেবারেই আমার ভালো যাচ্ছে না।
“মন খারাপ?”
আমি বলি—নাহ! শরীর খারাপ। পরক্ষ্ণেই অপরাধবোধ ঘিরে ধরে আমায়। মিথ্যে বলে ফেললাম না তো? কপালে হাত দিতেই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাই। বাহ! এখনও জ্বর আছে। যাক মিথ্যে হয়নি কথাটা। নিজেকে সহ্য করতে করতে এই জ্বরটাকেও যে কখন সহ্য করা শিখে গেছি মনেও নেই।

“আমার মন খারাপ” বাক্যটায় কেমন যেন একটা পরাজয়ের গন্ধ আছে। অনেকটা জ্বরের গন্ধের মতো। আমি পরাজয় পছন্দ করি না। যদিও তার সাথে আমার সম্পর্ক অতি প্রাচীন, অতি গভীর…